হ্যামট্রাম্যাক, ৯ ডিসেম্বর : তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে মিশিগান রাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক সিটিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবি এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল রোববার দুপুরে শহরের জোসেফ ক্যাম্পাউ স্ট্রিটে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দুপুর ১টায় হ্যামট্রাম্যাক টাউন সেন্টারে মিশিগান কালিবাড়ী, শিবমন্দির টেম্পল অব জয়, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা দেশব্যাপী সংঘটিত মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের নিন্দা জানান। সেই সাথে দ্রুত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তিসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অতিসত্বর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
মিশিগান কালীবাড়ির প্রেসিডেন্ট শ্যামা হালদার বলেন, বাংলাদেশে গত ৫০ বছর ধরে একটি "জাতিগত নির্মূল অভিযান" চলছে। "এবার... কোন সমর্থন নেই, পুলিশ আসে না... (যখন তারা) মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা পুড়িয়ে দেয়," হালদার বললেন। "চিন্তিত হওয়ার প্রধান কারণ হল... হিন্দু জনসংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম (বাংলাদেশে)। তিনি বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তার, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বরও হ্যামট্রাম্যাকে বিক্ষোভ হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে হিন্দুদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার সময় অংশগ্রহণকারীরা হ্যামট্রাম্যাক শহরে আমেরিকান এবং বাংলাদেশ পতাকা বহন করেছিলেন। নভেম্বরের শেষের দিকে কৃষ্ণ দাস প্রভুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং জামিন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে বিশাল সমাবেশে নেতৃত্ব দেওয়ার পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী নামে পরিচিত প্রভুর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি ক্রমবর্ধমান মারাত্মক হয়ে উঠছে। আমি প্রশ্ন করি, 'কেন এই অবস্থার পরিবর্তন হল না? মানুষ কেন পরিবর্তন আনতে পারছে না? সরকার কেন এসব সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে? ' বলেন মিশিগান কালীবাড়ির মহুয়া সরকার।
অনেক দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে যারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন এবং আরও মারাত্মক। এর জন্য মূলত অগ্রাধিকারের অভাব এবং এই সম্প্রদায়গুলিকে রক্ষা করার জন্য অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাকে দায়ী করা যেতে পারে। ওরা মানুষ খুন করছে, মহিলাদের অপহরণ করছে, ইতিমধ্যেই আমাদের এক সন্ন্যাসীকে (প্রভু) কোনও কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকালে তিনি স্কুলে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
মহুয়া সরকারের স্বামী শিব সরকার বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, যিনি বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের মিডিয়া আউটলেটগুলি হিন্দুদের সাথে কীভাবে আচরণ করা হয় সে সম্পর্কে গল্পগুলি ভাগ না করার জন্য মুসলমানদের দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ও বাংলাদেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরা বলছেন, গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তারা আগের চেয়ে বেশি হামলার মুখোমুখি হয়েছেন। সরকার বলছে, হিন্দুদের প্রতি হুমকিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯১% মুসলমান, বাকিদের প্রায় পুরোটাই হিন্দু৷
অন্যান্য বক্তা এবং বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন যে হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে, চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ধর্মের কারণে হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। "আমরা চাই সকল হিন্দু স্বাধীন থাকুক... আমরা হিন্দুদের হত্যার বিচার চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি যে হিন্দুদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বাংলাদেশ সরকার সাহায্য করছে না, তাই আমি আমাদের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাসাদে হিন্দুদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করছি," বলেছেন ওয়ারেন কৌশিক গুহ,। "গত চার মাস ধরে অনেক হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে," গুহ বলেন। "শুধু হিন্দু হওয়ার জন্য, অন্য কিছু নয়, শুধু হিন্দু, তাই তারা তাদের চাকরি হারিয়েছে।"
অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া, বিনা কারণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সনাতনী ধর্ম গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বর্তমান বাংলাদেশ সরকার দায়ী। বক্তারা বলেন, অতিসত্বর চিন্ময় দাস প্রভুকে মুক্তি দিতে হবে এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা প্রদান করা হোক। মানব বন্ধনে মিশিগান রাজ্যের বিভিন্ন সিটির সনাতন ধর্মাবলম্বীরা স্বত:স্ফূর্তভানে অংশ নেন। তারা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কালীবাড়ীর প্রেসিডেন্ট শ্যামা হালদার, মহুয়া সরকার, কৌশিক গুহ, শিব মন্দিরের পক্ষে রতন হাওলাদার, সৌরভ চৌধুরী, রাখি রঞ্জন রায়, ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ দাশ, নৃপেশ সূত্রধর, শান্তি লাল বিশ্বাস, রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ অজিত দাশ, অবিনাশ চৌধুরী, তাপস দেব, সানি রেড্ডি, ল্যাথম সেথে, অশোক বাড্ডি প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মিশিগান কালীবাড়ির প্রসিডেন্ট মিশিগান কালীবাড়ির প্রেসিডেন্ট শ্যামা হালদার। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা নির্যাতনবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দেন। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড বহন করেন। বিক্ষোভরতদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি চালকরা হর্ন বাজিয়ে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan